মোটা হওয়ার জন্য আপনি যত যা-ই করেন না কেন, ২ টি কাজ অবশ্যই করতে হবে। মোটা হওয়ার জন্য সেই দুইটি কাজ হলো ব্যায়াম ও খাবার। দুইটির কোনো একটি ছাড়া আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে না। কোনো মেডিসিন নিয়ে, শুধু ঘুমিয়েই মোটা হওয়া যায় না। খাবার আর ব্যায়ামের অবদান সবচেয়ে বেশি।
আপনাদেরকে মোটা হওয়ার ২ টি কার্যকর উপায় ব্যায়াম ও খাবার সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতেই এই লেখাটি লিখছি।
মোটা হওয়ার জন্য কী করতে হবে?
অনেকেই মনে করে শুধু বেশি বেশি খাবার খেলেই দ্রুত মোটা হওয়া সম্ভব। তাই তারা ভাজাপোড়া, মশলাদার, চিনিযুক্ত খাবার বেশি করে খায়।
কিন্তু এসব জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড খেয়ে মোটা হওয়ার আশা করা বোকামি হবে। কারণ জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর খাবার। এসব খাবার খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়।
মোটা হতে চাইলে স্বাস্থ্যকরভাবে হোন। স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে ভরাট স্বাস্থ্যের অধিকারী হোন। এই সুযোগ আপনি পাবেন অধিক ক্যালরির খাবার খেয়ে এবং কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করে।
যদি শুধু খাবার খেয়েই মোটা হতে চান, তাহলে সেটা কার্যকর হবে না। কারণ, খাবার থেকে পাওয়া ক্যালরি তো আপনার সারা দেহে পাঠাতে হবে। তাই নয় কি? দেহে ক্যালরি পাঠানোর কাজটি করে ব্যায়াম।
একটি করবেন আরেকটি করবেন না, এমনটা করলে সুফল পাবেন না। অধিক ক্যালরির পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম – দুটোই চালিয়ে যেতে হবে। তবেই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ওজন বাড়িয়ে মোটা হতে পারবেন।
এখানে আমি কার্যকর কিছু ব্যায়াম, ব্যায়ামের সরঞ্জাম / যন্ত্রপাতি কী কী লাগবে, যন্ত্রপাতিগুলো কোথায় পাবেন, কী কী পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে – এই সবকিছুই আলোচনা করবো। পড়া চালিয়ে যান।
পড়ুন – ব্যায়ামের উপকারিতা
মোটা হওয়ার কার্যকর ২ টি উপায়
মোটা হওয়ার কার্যকর ব্যায়াম
পূর্বেই বলেছি যে, আপনি খাবার খেলেন এবং এখন সেই খাবারের সব পুষ্টি ও ক্যালরি গুলো আপনার শরীরের সব অঙ্গে, পেশিতে পাঠাতে হবে। তার জন্য করতে হবে ব্যায়াম। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামই কেবল আপনার শরীরে শক্তি, পুষ্টি পৌছানোর কাজ করবে।
নিম্নে উল্লেখিত ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করতে চেষ্টা করুন। নিয়মিত সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন করুন।
হাতের পেশি মোটা করার জন্য :
ডাম্বেল তোলা
কয়েক কেজি ওজনের ডাম্বেল এক হাতে তুলে কসরত করা। ডাম্বেল হাতে নিয়ে একবার হাত সোজা করা, আরেকবার বাঁকা করা। এভাবে কয়েকবার করার পর অন্য হাতেও একইভাবে কসরত করুন।
ভালোমানের ডাম্বেল আপনি এই ওয়েবসাইট থেকেই কিনতে পারবেন।
ভিজিট করুন – https://www.alaul.com/wholesale-marketplace/
চিৎ হয়ে শুয়ে ডাম্বেল অথবা বার উঠানামা করানো
মাটিতে, বেঞ্চে, মাদুরে, বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে এই ব্যায়ামটি করতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো হবে বেঞ্চে করলে। চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা দিয়ে মাটিতে ভর দিয়ে দুই হাতে ডাম্বেল ধরে একবার হাত উপরের দিকে তুলে, আরেকবার নিচের দিকে নামান। এভাবে কয়েকবার করে করুন।
অথবা ‘ওয়েইট বার’ থাকলে দুই হাত দিয়ে একসাথে সেটি ধরে একবার উপরের দিকে তুলুন, আরেকবার বুকের দিকে নামিয়ে আনুন।
পুশআপ করা
এটা সম্পর্কে জানেনই কীভাবে করতে হয়। পুশআপ আপনার বাহু, কাঁধ, হাতের বেশি সবল, মোটা ও শক্তিশালী করে তুলবে।
পুশআপে শুধু হাত, কাঁধ না, পেট ও পায়ের পেশিরও ব্যায়াম হবে।
পুলআপ
অর্থাৎ হ্যাঙ্গার ধরে ঝুলতে ঝুলতে শরীর উপরে তোলা ও নামানো।
এরজন্য আপনার প্রয়োজন হবে দুটি খুঁটির / খামের মাথায় একটি শক্ত হ্যাঙ্গার যা হবে লাঠি, কাঠ, বাঁশ, লোহার পাইপ বা দণ্ড দিয়ে তৈরি।
খুঁটির মাথায় বেঁধে সেটা দুই হাতে ধরে একবার উপরের দিকে উঠুন, আরেকবার নিচের দিকে নামুন। চেষ্টা করবেন সেই দণ্ড বেয়ে উঠার সময় আপনার বুক দণ্ড পর্যন্ত তোলার। পা মাটিতে লাগানো যাবে না। এভাবে কয়েক বার করুন।
পায়ের পেশি মোটা করার জন্য :
উবু হয়ে উঠ-বস করা
দুই পায়ের উপর শরীরের সমস্ত ভর রেখে বসার ভঙ্গি করার মতো এটি।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই পা একটু ফাঁক রেখে দুই হাত দিয়ে কোমর ধরে কিছুটা সামনের দিকে উবু হয়ে দাঁড়ান। তারপর দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসার মতো ভঙ্গি করুন, আবার উঠে দাঁড়ান। কোমরের উপরের অংশ নড়াচড়া করবেন না। শুধুমাত্র দুই পা দিয়েই করতে হবে।
কয়েক বার এভাবে উঠ-বস করুন। এই ব্যায়ামটি পায়ের পেশি সবল, মোটা ও শক্তিশালী করবে। সেই সাথে উরু, নিতম্বের পেশিও।
ট্রেডমিলে দৌঁড়ানো
আপনি নিশ্চয় জানেন দৌড়বিদ ও ফুটবলাররা এই ব্যায়ামটি বেশি করে থাকে। এতে তাদের গতি বৃদ্ধি পায়। খেয়াল করে দেখবেন তাদের পা, উরু সবল ও মোটা।
খোলা জায়গায় দৌঁড়ালে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়। আর ট্রেডমিলে মূলত পায়ের ব্যায়াম বেশি হয়।
সুবিধাজনক ট্রেডমিল পাবেন এই ওয়েবসাইটেই। লিংক ডাম্বেল এর প্যারায় দেওয়া হয়েছে।
সোজা দাঁড়িয়ে পা বাঁকানো
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক পা সামনে হাঁটু কিছুটা ভেঙে এক কদম হাঁটার মতো করে দাঁড়ান অন্য পা পেছনে রেখে হাঁটু গেড়ে অনেকটা মাটিতে স্পর্শ করানোর মতো। বোঝার সুবিধার্থে ছবি দিয়ে দিচ্ছি।

এভাবে পজিশন নিয়ে এক পা সামনে এনে আরেক পা পেছনে নিয়ে সামনের পায়ে ভর দিয়ে উঠ-বস করতে থাকুন।
সাইক্লিং
এটি পা, উরু, কোমরের পেশির জন্য উপকারী।
এর জন্য সাইকেল চালাতে পারেন। তবে বেশি ভালো হবে একটা সাইক্লিং মেশিন দিয়ে করা। আপনি মেশিনটি পাবেন এখান থেকেই।
দেখুন এখানে গিয়ে – https://www.alaul.com/product/six-pack-care-with-cycle-black/
পেট ও পিঠের পেশির জন্য
উপরের ব্যায়াম গুলোই পেট ও পিঠের জন্যও করা যাবে। বিশেষ করে পুশআপ, চিৎ হয়ে শুয়ে ডাম্বেল বা ওয়েইট বার তোলা।
আর এগুলো করতে পারেন –
চিৎ হয়ে শুয়ে পা সোজা রেখে দুই হাত মাথার নিচে রেখে সামনের দিকে উঠতে চেষ্টা করুন। পা মাটি থেকে তুলবেন না। শুধু কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত অংশটুকু তুলতে চেষ্টা করবেন।
১০-২০ বার এভাবে করুন।
প্ল্যাঙ্ক
এটা পুশআপের মতোই। কিন্তু এটাতে দুই কনুইয়ে ভর রেখে সোজা হয়ে উপুড় হয়ে থাকতে হবে কিছুক্ষণ।
এই ব্যায়াম গুলোই যদি নিয়মিত অথবা সপ্তাহে ২-৩ দিন করে যান মাসখানেক, তাহলে অবশ্যই উন্নতি হবে।
এই ব্যায়াম গুলো ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং অনেক মানুষের বাস্তব ফলাফল থেকে নেওয়া। আপনিও এগুলো করার মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
পুষ্টিকর খাবার
শুধু পুষ্টিকর খাবার নয়, তাতে থাকতে হবে বেশি ক্যালরি। ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি ক্যালরি নিতে হবে। প্রতিদিন আপনার যে পরিমাণ ক্যালরি বা শক্তি খরচ হচ্ছে বিভিন্ন কাজে, তার চেয়ে ৫০০-১০০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করতে হবে।
বেশি বেশি ক্যালরি রয়েছে এমন কিছু খাবার হলো :- ভাত, গমের আটার রুটি, ভুট্টা, আলু, মাছ , মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ডিম, দুধ, দই, কলা, অ্যাভোকাডো, খেজুর, ডাল, আখরোট, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম।
এই খাবারগুলো স্বাভাবিক পরিমাণের তুলনায় একটু বেশি আনুমানিক ২০-২৫ গ্রাম বেশি করে খাবেন।
দুইবেলা, তিনবেলা না খেয়ে ঘনঘন খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপরই কিছু খাবেন। ভারী খাবার তিনবেলা খাবেন সকাল, দুপুর, রাতে। পাশাপাশি কয়েক ঘণ্টা পরপর হালকা বা স্ন্যাকস খাবার খাবেন যেন খিদে না জাগে।
এবং অবশ্যই ৮-১০ গ্লাস পানি প্রতিদিন পান করতে হবে।
আরও যেগুলো করতে হবে
খাবার আর শারীরিক পরিশ্রম আবশ্যক তো বটেই, সেই সাথে ঘুমও ভালো হতে হবে। পরিপূর্ণ ঘুম না হলে শরীরে পুষ্টি ও ক্যালরি ঠিকঠাক কাজ করতে পারবে না। তাই পরিমিত ঘুমান বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম।
বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ধুমপান, তামাক, অ্যালকোহল এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা সবাই জানে। এই বাজে কাজ গুলো বাদ দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন।
ডিপ্রেশন, চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন।
পরিশেষে
উপরে আলোচনায় যে বিষয়গুলো বললাম এগুলোই মূলত মোটা হওয়ার কার্যকর উপায়। এগুলোর বাইরে আর তেমন ফলপ্রসূ উপায় নেই। নিয়মিত এগুলো চালিয়ে যেতে পারলে ২-৩ মাসের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
তাই মেডিসিন, জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড এর মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে না গিয়ে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে চেষ্টা করুন।