মেদ বা দেহে চর্বি স্তর জমলে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে বাইরে চলাফেরা করতে সংকোচ বোধ করে থাকে। কারণ, শারীরিক গঠন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে লজ্জা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে, বডি শেমিংয়ে পড়তে পারে ভেবেই তারা এমনটা করেন। মানুষের বয়স বাড়ার ফলে দেহে চর্বি স্তরও বাড়তে থাকে। কেন দেহে মেদ জমে? মেদ কমানোর উপযুক্ত উপায় কী? এইসব আলোচনায় থাকছে এই পোস্টে।
মেদ কেন হয়?
জন্মের পর থেকে মানুষের বয়স বাড়তেই থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ভিতরের বিভিন্ন কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্রমও পরিবর্তন হতে থাকে। প্রতিদিনের খাবার ও দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে দেহে যেসব ক্যালরি অবশিষ্ট থাকে, তা একসময় চর্বি আকারে জমা হতে থাকে। দেহে শক্তি জোগানোর মূল উৎস হচ্ছে চর্বি।
যদি সেই অবশিষ্ট ক্যালরি খরচ করা না হয়, তাহলে তা চর্বিতে পরিণত হয়ে স্তর সৃষ্টি করে। পরে সেই চর্বি স্তর মানুষের দেহের পেটে, পিঠে, কোমরে, বগলের নিচে মেদ আকারে দেখা যায়।
অর্থাৎ, শুয়ে-বসে থাকা, পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া – এই কারণগুলিই মেদ হওয়ার জন্য দায়ী। মেদ বাড়ার ফলে ওজনও বাড়তে থাকে বিধায় ওজনাধিক্যতার কারণে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এর মতো মরণঘাতী রোগ হওয়ার সম্ভাবণা সৃষ্টি হয়।
তাই যেকোনো বয়সীদের উচিত মেদ কমিয়ে নিজেকে সুস্থ সবল রাখা।
পড়ুন- ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা ও ব্যায়াম
মেদ কমানোর উপযুক্ত উপায়
এতক্ষণে হয়তো বুঝতে পেরেছেন কেন মেদ হয়। মেদ হওয়ার কারণগুলি এড়িয়ে গেলেই মেদকে ঝরিয়ে শরীরকে সঠিক শেইপে আনা যাবে।
মেদ কমানোর এমনকিছু কার্যকর ও উপযুক্ত উপায় সম্পর্কে এখন আপনাদের বলবো যেগুলো মেনে চললে অল্প সময়েই মেদ ঝরিয়ে ফিট হতে পারবেন।
খাবার
চর্বি স্তর হওয়ার পেছনে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শর্করা ও অধিক চর্বি বা তেলযুক্ত খাবার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তাই এই ধরণের খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শর্করা, লাল মাংস ( গরু, ছাগল, মহিষ), অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, বার্গার, পিজ্জা, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল – ইত্যাদি খাবার ও পানীয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে না খাওয়ার।
দানা শস্য, ফলমূল, আঁশজাতীয়, প্রোটিন যুক্ত খাবারগুলো বেশি করে খেতে হবে। বিভিন্ন ডাল, বীজ, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
ভাত, আলু, রুটি হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ এগুলোতে শর্করা থাকে। তাই এগুলো তিনবেলা না খেয়ে এক বেলা অথবা সম্ভব হলে সপ্তাহে ৩ দিন খাওয়ার জন্য রাখলে ভালো হয়। যত কম সম্ভব এগুলো খেতে হবে।
প্রতিদিন কম করেও ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
পরিশ্রম
পরিশ্রম বলতে শারীরিক না কায়িক পরিশ্রম, যার সাহায্যে ক্যালরি ও শক্তি খরচ করা যায়। কারও পরিশ্রম এর কাজ না থাকলে ব্যায়াম করে মেদ কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপরে বলা খাবারের পদ্ধতিটি মানলেই যথেষ্ট হবে না। ক্যালরি ও চর্বি স্তরকে ভাঙতে মাঝারি ও ভারী ব্যায়াম করতেই হবে। তা না করলে মেদ কমানো যাবে না।
ভাবছেন মাঝারি, ভারী ব্যায়ামের উপকরণ কোথায় পাবেন? চিন্তা করবেন না। আলাউল ডটকম থেকেই খুব ভালো মানের ব্যায়াম উপকরণ পাবেন। লিংকটিতে গিয়ে দেখে নিন-
https://www.alaul.com/product-category/health-and-medical/
যে ব্যায়াম গুলো পেট, তলপেট, পিঠ, বগল এর মেদ কমাতে কার্যকর, সেই ব্যায়াম গুলো কীভাবে করতে হয় তা এখানে বিস্তারিত সহ উল্লেখ করছি।
১. স্টোমাক ভ্যাকুয়াম এক্সারসাইজ : নাম দেখে বুঝতে পারছেন এটা পাকস্থলীর ব্যায়াম। এই ব্যায়ামে পাকস্থলীর আশেপাশে নির্দিষ্ট করে বললে কোমরের মেদ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে ফিটনেস এক্সপার্টরা বলেন।
এটি করতে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুই পা কিছুটা ফাঁক করে আরামে দাঁড়াবেন। দুই হাত কোমরে রাখবেন। নাক দিয়ে ৩-৫ সেকেন্ড ধীরে শ্বাস টানুন। শ্বাস কিছুক্ষণ ধরে রেখে অতঃপর মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
তারপর স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস চালান। ১৫-২০ সেকেন্ড শ্বাস টেনে ধরে রাখুন। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো করে শ্বাস ছাড়ুন। কয়েকবার চালিয়ে যান এভাবে। চাইলে দিনে ৩ বারই এটি করতে পারেন। এবং চাইলে শুধু দাঁড়িয়ে নয়, বসে, চিৎ হয়ে শুয়ে, উপুড় হয়ে বসেও করতে পারেন।
অবশ্যই খালি পেটে করতে হবে এই ভ্যাকুয়াম এক্সারসাইজটি।
২. অদৃশ্য চেয়ারে উঠ-বস করা : খুবই কার্যকর একটি ব্যায়াম। এটি পেট, পিঠ, কোমর, বগল, উরুর চর্বি বা মেদ কমাতে দারুণ কার্যকরী।
চেয়ারে যেভাবে বসতে হয়, সেভাবে বসা কল্পনা করে বসুন। দুই হাত সামনের দিকে সোজা ধরে রাখুন। তারপর বসা থেকে উঠতে চেষ্টা করুন, আবার বসুন, আবার উঠুন। এতে শুধু হাঁটু ব্যবহার হবে। হাঁটু ভেঙে বসা ও উঠার কাজটি করতে হবে। ১০ বার করুন এভাবে। সম্ভব হলে আরও বেশিবার।
৩. কুকুর ও পাখির পজিশন : কুকুরের মতো চার হাত-পা ব্যবহার করে উপুড় হয়ে বসুন। অতঃপর ডান হাত মাথা বরাবর সামনে সোজা করে ধরুন। আর বাম পা সোজা করে উপরে তুলতে চেষ্টা করুন। দেখতে অনেকটাই পাখি উড়ার মতো পজিশন।
তারপর অন্য হাত ও পা দিয়েও এভাবে করুন।
৪. ভার উত্তোলন করা : ডাম্বেল তোলা, দুই হাত দিয়ে ভারী বস্তু উঠানো এগুলোই ভার উত্তোলন। এটি করলে বগলের, পেটের, পিঠের, উরুর মেদ কমবে ও পেশি শক্তিশালী হবে।
৫. পেটকে উপরে তুলে ধরা : চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা হাঁটু ভাজ করে রাখুন। দুই হাত মাটিতে শরীর বরাবর সোজা অবস্থায় রাখুন। এরপর দুই হাত, বাহু, কনুই ও ঘাড়ের উপর বল প্রয়োগ করে পেট, কোমর উপরের দিকে তুলতে থাকুন। কয়েক বার করুন। পিঠ ও পেটের মেদ কমাতে এটি কার্যকর।
৬. পুশআপ : এটি কীভাবে করতে হয় তা সবারই জানা আছে নিশ্চয়। সোজা উপুড় হয়ে দুই পা ও দুই হাত সোজা করে হাত ও পায়ের উপর সকল ভর রাখতে হবে। তারপর দুই হাত দিয়ে মাটিতে বল প্রয়োগ করে কনুই ভেঙে বুক মাটির সাথে লাগাতে হবে। বুক মাটির সাথে না লাগালেও মাটির একদম কাছে নামাতে হবে।
এভাবেই পুশআপ করবেন কয়েক বার। খেয়াল রাখবেন এতে শুধু কনুই ও শরীরের উপরের অংশ ব্যবহার হবে, কোমরের নিচের অংশ, হাঁটু একদম সোজা থাকবে।
৭. প্ল্যাঙ্ক : এটিও পুশআপ এর মতোই পজিশন নিতে হয়। কিন্তু এতে কনুই ভাজ করে কনুই ও পায়ে ভর রাখতে হয়। একদম সোজা হয়ে থাকতে হয় ভর রেখে।
এই ব্যায়াম গুলো নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট করে করতে পারলেই ১ মাসের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
জীবনযাত্রা
পরিপূর্ণ ঘুমাতে হবে। ডিপ্রেশন, হতাশা দূরে রাখতে হবে।
উপরিউক্ত খাবার, পরিশ্রম ও জীবনযাত্রার নিয়মগুলো মানতে করলেই কার্যকর ফলাফল পাবেন।
মেদ নিয়ে আর লজ্জিত ও বিব্রত থাকতে হবে না। মেদ কমানোর এই উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চলতে পারলে এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।