Health and Medical

মাথা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে যা করবেন

মাথা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার উপায়

মাথা ব্যথা প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোনো না কোনো সময়ে হয়। এটা সাধারণ একটি ঘটনা। মাথা ব্যথা হলেই সেটা কোনো রোগের লক্ষণ না। বরং মাথা ব্যথা হয়ে থাকে নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজকর্ম ও অভ্যাসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। কেন মাথা ব্যথা হয়, মাথা ব্যথা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী, মেডিসিন ছাড়া কি ব্যথা কমানো সম্ভব? – এই বিষয়গুলো নিয়েই থাকছে এই লেখায়।

কেন মাথা ব্যথা হয়?

মাথা ব্যথা হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করা মুশকিল। অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক চাপ, না খেয়ে না খালি পেটে থাকা, ঘুম কম, ধুমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ, পানি কম খাওয়া, সাইনাস ( নাকের একটি রোগ), অতিরিক্ত কৃত্রিম আলোতে থাকা, অতিরিক্ত শব্দময় পরিবেশে থাকা, ডিজিটাল ডিভাইস যেমন- মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির পর্দায় অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা – এই কারণগুলোকেই মূলত মাথা ব্যথার প্রভাবক হিসেবে ধরা হয়।

ব্যথা হতে পারে মাথার যেকোনো একপাশে অথবা দুইপাশেই, মাথার তালুতে, কপালের দিকে, ঘাড়ে।

মাথা ব্যথা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে শুধু মাথা ব্যথাই হয় না, অন্যান্য লক্ষণও থাকে। তাই মাথা ব্যথাকে কোনো রোগ বলা যায় না।

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই জীবনে একবার হলেও মাথা ব্যথায় ভোগে থাকে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সীরাও এতে শিকার হয়।

কারণ অনুযায়ী মাথা ব্যথার স্থায়ীত্ব আলাদা আলাদা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা কয়েক মিনিট অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেরে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে কয়েকদিন পর্যন্তও থাকতে পারে।

কিছু ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করলেই মাথা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। সেরকম কার্যকর কিছু উপায় নিয়েই বলবো আপনাদের।

মাথা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায়

ব্যথা হওয়ার যে কারণগুলো রয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে চললেই এ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কার্যকর কিছু উপায় হলো –

আলো থেকে দূরে থাকুন

অধিকাংশ মানুষের মতামত থেকে জানা যায় যে, কম আলোর অথবা অন্ধকার ঘরে থাকলে মাথা ব্যথা কম অনুভূত হয়। আধো আলো, অন্ধকার ঘরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন চোখ বোজে, অথবা একটু ঘুমিয়ে নিন। ব্যথা চলে যাবে।

বিশ্রাম

কাজের সময় মাথাব্যথার উদ্ভব হলে কাজ বন্ধ করে দিন। হতে পারে কাজের ক্লান্তিতে বা কাজের চাপের ফলে মাথা ধরতে চাচ্ছে। তাই কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিন।

আদা, দারুচিনি, এলাচি ও লেবু খান

রক্ত চলাচলের অস্বাভাবিকতার কারণে যদি ব্যথা হয়ে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কার্যকর হবে আদা, দারুচিনি। আদায় ও দারুচিনিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্ত চলাচল বাড়াতে কাজ করে। আদা কুচি করে কাঁচা খেতে পারেন, অথবা চায়ে আদার কুচি মিশিয়ে খেতে পারেন।

এলাচিগুঁড়া চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও দারুচিনির মতো উপকার দিবে এলাচি।

লেবু ভিটামিন-সি তে ভরপুর এবং টক ফল। শরীরকে রিফ্রেশ করতে কাজ করে লেবু। ক্লান্তি, চাপ কমায়। লেবুর কয়েকটা ফালি বা স্লাইস চিবিয়ে বা চুষে রস খান, অথবা চায়েও লেবু দিয়ে খেতে পারেন।

চা, কফি

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে চা, কফিতে থাকা ক্যাফেইন সরাসরি মাথা ব্যথার বিরুদ্ধে কার্যকর। তাই যখন ব্যথা হবে তখন গরম চা, কফি পান করুন। যেকোনো একটি পান করবেন। একসাথে খাবেন না। আবার একটার পর আরেকটাও খাবেন না। চায়ে আদা, লেবু, দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচিগুঁড়া মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

গরম ছেঁকা

ব্যথা মাথার যে পাশে হচ্ছে, একটু কাপড় পেঁচিয়ে বা পুটলি আকারে গরম করে ব্যথার জায়গায় ধরে রাখুন। কয়েক মিনিট এই গরম ছেঁকা দিতে থাকলে ব্যথা থেকে অনেকটা আরাম পাওয়া যাবে।

মাথা মালিশ করা

খুবই আরামদায়ক পদ্ধতি এবং কার্যকরও। নিজে মাথা মালিশ করতে না পারলে কাউকে দিয়ে মাথা মালিশ করান। কপালের সামনে, দুইপাশে, ঘাড়ে মালিশ করুন। সাথে একটু গরম তেল মেখে নিয়েও মালিশ করতে পারেন। তাতে দেখবেন ব্যথা কিছুক্ষণের মধ্যেই কমে গেছে।

পানি পান ও খাবার

দেহে পানিশূন্যতা হলে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে ব্যথা হয়। তাই দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি খাবেন।

খিদে রাখবেন না বেশিক্ষণ। খিদের কারণেও ব্যথা হওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। নিয়মিত খাবার খেয়ে নিবেন। তাতে দেহের ক্রিয়া গুলো স্বাভাবিক থাকবে। ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার বিশেষ করে কলা খেলেও কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যথা কমে যায়।

ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুমই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি কার্যকর উপায়। মাথাব্যথা দূরে রাখতে প্রতিদিন ঠিকমতো পরিপূর্ণ ঘুম দিন। ব্যথা শুরু হলে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান। ঘুম থেকে উঠে আর ব্যথা অনুভব হবে না।

যোগব্যায়াম

মন ও শরীরকে রিফ্রেশ রাখার বর্তমানে বহুল জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে ইয়োগা। যাকে যোগব্যায়াম বলা হয়। যোগব্যায়ামের ফলে মাথার স্নায়ুগুলি ও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক কাজ করে। মনকে শান্ত করতে, রক্ত চলাচল বাড়াতে, দম বাড়াতে যোগব্যায়াম কার্যকর।

চিবানো বন্ধ রাখা

খাবার খাওয়ার অথবা অন্য কোনোভাবে মুখ নড়াচড়া করার ফলে ব্যথা আরও বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই চেষ্টা করবেন ব্যথার সময় মুখ নড়াচড়া যত কম করা যায়।

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার

মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি, গেমিং ডিভাইস অন্ধকারে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যবহার করতে হলে নীল আলো থেকে সুরক্ষা দেয় এমন চশমা, লেন্স পরলে ভালো হয়। যখন ব্যথা থাকবে, তখন এসব ডিভাইস থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে।

মেডিসিন

ব্যথানাশক মেডিসিন দেহের জন্য বিশেষ করে কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই ব্যথা হলেই পেইনকিলার খেতে ছুটবেন না। ধৈর্য্য রাখুন। উপরের পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ করে যদি উপকার না পান, তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন নিন।

প্যারাসিটামল এর ট্যাবলেট গুলো নেওয়া যায়। এগুলো নিরাপদ। তবে ব্যথার শুরুতেই না নিয়ে আগে উপরোক্ত উপায়গুলো চেষ্টা করুন।

সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর আরেকটি উপায় হচ্ছে মলম ও স্প্রে লাগানো। Volini (ভোলিনি) ব্যথা উপশমে অন্তত কার্যকর। উপশমকারী এই মলম, জেল, স্প্রে পাচ্ছেন আলাউল ডটকমে। বিস্তারিত জানতে লিংকে গিয়ে দেখে নিন – Volini pain relief

আলাউল এর কথা

মাথা ব্যথা সবারই হয়। এতে ধৈর্য্য হারা হয়ে আগেই কোনো মেডিসিন না নিয়ে এখানে বলা পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এগুলোর মাধ্যমে। তাই আপনিও চেষ্টা করুন।

Back to list

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *