সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের উপকারিতা অনেক। বলা যায় একজন মানুষের সুস্থ থাকার শতভাগ কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে ব্যায়াম। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ হয়ে পড়ছে অলস, বাস্তবতা বিমুখ। বাস্তবিক শারীরিক ক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে দেহে বিভিন্ন রোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, কম বয়সেই চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়ে অনেকে।
আলাউল ডটকম এর এই লেখাতে আপনাদেরকে বোঝানো হবে প্রতিটি মানুষের জন্য ব্যায়ামের উপকারিতা কতটা।
ব্যায়ামের ১০ টি উপকারিতা
মন ভালো করা, হার্ট সুস্থ রাখা, ব্লাড প্রেশার ঠিক রাখা, যৌন সক্ষমতা বাড়ানো, ডায়াবেটিস দমিয়ে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকার পাওয়া যায় ব্যায়াম করে। এখানে ব্যায়াম করার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বলা হলো।
১.মুড বুস্টার
আপনার মুডকে বুস্ট করতে, ডিপ্রেশন কাটিয়ে তুলতে ব্যায়াম আপনাকে সাহায্য করবে। দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছেন? দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না? সবসময় নেগেটিভিটি বা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও এরকম পরিবেশের মধ্যে থাকেন?
তাহলে প্রতিদিন অন্তত ২৫ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন। খুব ভারী ব্যায়াম করতে হবে না। হালকা কয়েকটি ব্যায়াম করলেই তা আপনার সুস্থ থাকার পথ করে দিবে।
মস্তিষ্কের যে অংশ হতাশা, উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপের জন্য দায়ীশ ব্যায়াম করার ফলে সেই অবস্থা কেটে গিয়ে মনমেজাজ ভালো করার হরমোন নিঃসরণ হওয়া শুরু করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডব্লিউএইচও) এর মতে, প্রতিদিনের ২৫ মিনিট ব্যায়াম একজন মানুষের ডিপ্রেশন দূরীকরণ, হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতিকরণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিতকরণ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
২.ব্লাড প্রেশার ঠিক রাখা
উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ হচ্ছে মানুষের রক্তচাপের দু’টি ধরণ। দু’টির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপকে নীরবঘাতকও বলা হয়। কারণ, উচ্চ রক্তচাপের কারণে ডায়াবেটিস ও হার্ট অ্যাটাক এর মতো মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে।
ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সহজ কিছু এক্সারসাইজ করলেই আপনি রক্ত চলাচল ভালো রাখতে পারবেন।
৩.ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ
উপরে বলেছি যে, উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবণা থাকে। তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও এড়ানো যাবে।
নিয়মিত মৃদু মাত্রার কিছু ব্যায়াম করলে রক্তে ইনসুলিন এর মাত্রা ঠিক থাকে। ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রাখা সহজ হয়।
৪.হার্ট সুস্থ রাখা
রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রাখলে হার্টের জন্য তা ভালো। হার্ট ভালো রাখার এই কাজটি করতে পারে ব্যায়াম। ব্যায়ামে হার্টে রক্ত পাম্প করার হার বাড়ে যা সুস্থ হৃদপিণ্ডের লক্ষণ।
৫.ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
অতিরিক্ত ওজন কারও জন্য সুবিধার নয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বয়সের ছাপ পড়া, থাইরয়েডের সমস্যা হওয়ার মতো জটিল অবস্থা হতে পারে। তাই ওজন কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রিত রাখা সবার উচিত।
ওজন কমানোর কাজটি করা যায় ব্যায়ামের দ্বারা। ভারী ব্যায়াম এক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
ওজন কমানোর উপায় জানতে এটি পড়ুন –
ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা ও ব্যায়াম
৬.ত্বক সুস্থ রাখা
শরীরে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি, মাত্রাতিরিক্ত ডিপ্রেশনের ফলে ত্বকের কোষ দূর্বল হয়ে যেতে থাকে। ফলে চেহারায় অল্প বয়সে বয়স্কদের মতো ছাপ পড়া শুরু করে।
দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া ও ডিপ্রেশন মুক্ত থাকার কাজ করতে ব্যায়াম খুবই কার্যকর।
৭.যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি
অকাল বীর্যপাত, সহবাসে তৃপ্তি না পাওয়ার মতো সেক্সুয়াল সমস্যায় যারা ভুগছে তাদের জন্য উপকারী উপায় হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
ব্যায়াম যেহেতু হার্টে রক্ত পাম্প করতে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমনীয়তা বাড়াতে কাজ করে, সেহেতু সেক্স লাইফেও এটা কার্যকর। দম ভালো হলে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া ভালো হলে যৌন জীবনেও সুখী হওয়া যায়। এই কাজগুলো করার জন্য ব্যায়াম উপযুক্ত একটি মাধ্যম।
শুধু পুরুষদেরই নয়, নারীদের যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও ব্যায়াম সহায়ক।
৮.স্মৃতিশক্তি ও ব্রেইনের উন্নতি
ব্যায়াম করায় একাধিক হরমোন নিঃসরণ এবং ব্রেইনের কোষগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ফলে স্মৃতিশক্তির দূর্বলতা কেটে গিয়ে স্মৃতিশক্তি উন্নত হবে। অসংখ্য কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে বলে ব্রেইনের বিভিন্ন ক্ষতি থেকেও ব্রেইনকে মুক্ত রাখতে পারে ব্যায়াম।
৯.দীর্ঘকালীন অসুস্থতা নিরাময়
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে চলা কোনো শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা নিরাময় করতে ব্যায়াম খুব ভালো ভূমিকা পালন করে। এমনকি অনেকদিন ধরে ভুগতে থাকা অনেক রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
যেহেতু ব্যায়াম করলে রক্ত, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বাড়ে, তাই দীর্ঘকালীন অসুস্থতা নিরাময়েও তা সহায়ক।
১০.ভালো ঘুম
ভালোমতো ঘুম হওয়া সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত। ঘুম ভালো না হলে, ইনসমনিয়া তথা অনিদ্রায় ভুগতে থাকলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ভালো ঘুম যেন হয় সেদিকে সবার মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ব্যায়াম করায় রক্ত চলাচল ভালো থাকে, ব্রেইনে সুখীভাব বিরাজ করে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে। ফলে ঘুমও ভালো হয়। বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে সবাইকে।
সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এই ১০ টি উপকারিতার বাইরেও অনেক উপকার করে থাকে ব্যায়াম। সবাই সুস্থ থাকতে চায়, কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য কাজ করতে সবাই চায় না। সুস্থ থাকার জন্য কঠিন কোনো কাজ বা ব্যায়াম না করতে পারলেও সহজ ও হালকা কয়েকটি ব্যায়াম করেই ভালো থাকা যায়।
প্রতিদিন ২৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে তিনদিন হলেও করুন। ব্যায়াম করুন, সুস্থ থাকুন।