ওজন কমাতে গিয়ে মানুষের চেষ্টার কমতি থাকে না। বর্তমান যুগে স্লিম, ফিট থাকার জন্য মানুষ অজস্র টাকা ও সময় ব্যয় করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ওজন কমিয়ে আনতে পারে না। কেন পারে না? এর কারণও আছে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই কারণ, ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা ও ব্যায়াম, করণীয়, বর্জনীয়, খাবার ও ব্যায়াম করার যন্ত্র কোথায় পাবেন সেসব সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ওজন কমাতে যা প্রয়োজন
এটা সত্যি যে ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমাণ কমাতে হয়। শুধু খাবার কম খেলেই হবে না, আপনি সারাদিন যত ক্যালরি খাবারের সাথে নিচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি খরচ করতে হবে।
যেমন, আপনি সারাদিন ১৫০০ ক্যালরির খাবার খেলেন। এখন ওজন কমানোর জন্য আপনাকে এর চেয়ে বেশি ক্যালরি ঝরাতে হবেই। কীভাবে ঝরাবেন? অবশ্যই তা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমেই ঝরাতে হবে।
আপনি শুয়ে-বসে থাকলেই তো আর শরীর থেকে ক্যালরি বার্ন ( ঝরানো/পোড়ানো) করতে পারবেন না। তার জন্য ঘাম ঝরাতে হবে।
কেউ ওজন বাড়াতে চাইলেও খাবার ও ব্যায়াম করতে হবে, আবার কেউ কমাতে চাইলেও এই দু’টি কাজ করতে হবে। পার্থক্য হচ্ছে একটাতে বেশি বেশি ক্যালরি নিতে হয়, আরেকটিতে বেশি করে ক্যালরি ঝরাতে হয়।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই দু’টি কাজ করে না, আলসেমি করে থাকে। বেশিরভাগেরই আশা থাকে খাবার খেয়ে ওজন কমানোর অথবা বাড়ানোর। কিন্তু তা ভুল। ঠিক এই কারণেই অনেকে ওজন কমাতে গিয়ে সফল হয় না, কমাতে পারে না।
এই দুটি কাজ করার জন্য দৃঢ় মনোবল রাখতে হবে, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়। কারণ, দ্রুত ওজন কমাতে গেলে কিছু শারীরিক অসুবিধার সৃষ্টি হয় যা পুষ্টিহীনতা, পানিশূন্যতা, শক্তিহীনতার মতো সমস্যায় ভোগায়।
অতএব, ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে দৃঢ় মনোবল বজায় রেখে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ক্যালরি ঝরানোর জন্য ব্যায়াম বা পরিশ্রম করে যেতে থাকলে অবশ্যই আপনি ওজন কমাতে সফল হবেন। এই বিষয়গুলোর ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন। একটি করবেন, অন্যটি করবেন না – এমন করলে লাভ হবে না। নিয়মিত এই বিষয়গুলো চালিয়ে যেতে হবে।
পড়ুন- মোটা হওয়ার কার্যকর উপায়
ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা
যা-ই খান, সময়মতো খাবেন। খাওয়ায় অনিয়ম করবেন না। সকালে খেলেন, আবার একবারে সন্ধ্যায় অথবা রাতে খেলেন, এমনটা করলে ঠিক হবে না। কারণ, এভাবে খেলে পরের বার খাবারে বেশি করে খেতে হবে পেট ভরার জন্য। তঝন বেশি ক্যালরি নেওয়া হবে। ফলে তা ওজন কমানোর পথে বাঁধা হয়ে যাবে। সময়মতো ও সীমিত পরিমাণে খান।
নিচের এই তালিকাটি অনুসরণ করতে পারেন আপনার ওজন কমানোর রুটিনে।
ওজন বাড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য গুলো। কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, শ্বেতসার যুক্ত খাদ্য যেমন ভাত, রুটি, আলু, পরোটা, কোমল পানীয় ইত্যাদি। এই খাদ্য গুলো যতটা সম্ভব কম খেতে হবে ওজন কমাতে হলে।
প্রোটিন, ফাইবার ( আঁশ), ফলমূল খেতে হবে প্রতিদিন। কারণ এই উপাদান গুলোয় ক্যালরি ও চর্বি কম থাকে। তাই এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, মহিষের মাংস এরকম প্রোটিন গুলো সীমিত খেতে হবে। প্রোটিন নিবেন ডিম, মাছ, মুরগির মাংস থেকে।
ফলমূলের মধ্যে শসা, তরমুজ বেশি করে খাওয়া ভালো। ওজন কমাতে শসার কার্যকারিতা অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। শাকসবজি তে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায় যা সবার জন্যই প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। তাই তালিকায় প্রতিদিন শাকসবজি রাখবেন।
একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার তালিকা হচ্ছে :
সকালে যা খাবেন
খালি পেটে দুই গ্লাস পানি দিয়ে দিনটা শুরু করুন। নাস্তা ৮ টার দিকে করে নিলে ভালো। নাস্তায় রাখুন একটি সিদ্ধ ডিম, দুধ ও চিনি ছাড়া এক কাপ চা অথবা কফি, একটু সবজি বা সালাদ, একটি অথবা বড়জোর দুইটি রুটি। তবে লাল আটার রুটি হলে বেশি ভালো। সকালে ডিম খেলে দিনে খিদে কম পাবে।
ওজন কমানোর অন্যতম শর্ত হচ্ছে বেশি খিদে লাগানো যাবে না।
অনেকেই নাস্তা করতে চায় না, কিন্তু এই কাজটি করা মোটেও ঠিক হবে না যদি আপনি ওয়েইট লস করতে চান। সকালের নাস্তা দিয়ে দিন শুরু করতে হবে।
দুপুরের খাবারের আগে হালকা খাবার
নাস্তা করার ৩-৪ ঘণ্টা পর এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে এই হালকা খাবার খাবেন। এটাকে ‘জলখাবার’ও বলা হয়। বেলা ১১-১২ টার দিকে।
খিদের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেশি বেশি যেন খিদে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ বেশি খিদে লাগলে পেট ভরে খাবার খেতে আগ্রহ জাগবে ফলে বাড়তি ক্যালরি শরীরে ঢুকবে। তেমনটা হলে আপনার রুটিনে বজায় থাকতে পারবেন না। তাই ৩ বেলার খাবারের মাঝামাঝিতে হালকা খাবারও খেয়ে নিবেন যাতে বেশি খিদে না লাগে।
দুপুরের এই ‘জলখাবার’-এ খেতে পারেন পানি, একটি ডিম, একটি ফল, বাদাম। বেশি কিছু লাগবে না। অথবা যেকোনো একটি খাবেন।
দুপুরে যা খাবেন
অল্প ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস, সালাদ, শাকসবজি, ডাল। সালাদ বানাবেন শসা দিয়ে। এটা ফলপ্রসূ উপায়। আর এ সময় একটু দই খেতে পারেন।
দুপুরের খাবার খাবেন ২-৩ টার দিকে।
বিকেল/ সন্ধ্যার স্ন্যাকস
এসময়েও দুপুরের আগের ‘জলখাবার’ এর মতো হালকা কিছু খাবেন। যেহেতু পড়ন্ত বেলা হয়ে যায়, সেহেতু ফল, চা-বিস্কুট, বাদাম খেলেই যথেষ্ট।
রাতে যা খাবেন
রাতে দুপুরের খাবার গুলোর মতোই খেতে পারবেন। তবে কিছুটা কম। চেষ্টা করবেন এ সময় শাকসবজি, ফল অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি খাওয়ার।
প্রতিদিন দেড়-দুই লিটার পরিমাণ পানি পান করবেন।
এই রুটিন যদি ঠিকমতো এক মাস চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে দেখবেন ওজন কমার চেষ্টায় আপনি সফল হতে যাচ্ছেন।
যা যা খাবেন না
উপরেই বলেছি কার্বোহাইড্রেট একদম কম খেতে হবে। আর কিছু খাবার আছে যেগুলো না খেলেই ভালো, খেতে হলে একদমই কম খেতে হবে। সেরকম খাবারগুলো হলো – চিনিযুক্ত ও অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয়, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, মহিষের মাংস।
এসব খাবার যত সম্ভব হয় এড়িয়ে চলবেন।
ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম ও যন্ত্র
ওজন যদি কমাতে চায় কেউ, তাহলে মূল শর্ত কী সেটা আমি উপরে বলেছি। সেটা হলো ক্যালরি ঝরানো। ক্যালরি ঝরানোর কাজটি করতে হয় কায়িক পরিশ্রম অথবা ব্যায়ামের দ্বারা।
প্রযুক্তির যুগে সময় ও জায়গার অভাবে অনেকেরই শারীরিকভাবে পরিশ্রম করা হয় না। তারা সহজ কিছু ব্যায়াম করার মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারে।
যে ব্যায়াম গুলো করবেন :
হাঁটা : খুবই সহজ ব্যায়াম। এতে কোনো যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন হয় না। ঘরেই হাঁটুন দিনে ২০-৩০ মিনিট করে।
জগিং : হাঁটার চেয়ে কিছুটা গতি বাড়িয়ে জগিং করতে হয় বিধায় এতে ক্যালরিও ঝরানো যায় বেশি। এটিও উপকরণ ছাড়া একটি ব্যায়াম।
দৌড় : গতির সাথে দৌড়ালে অনেক ক্যালরি ঝরানো সম্ভব। দিনে ৫-৬ বার দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর মাধ্যমে ৫৫০ থেকে ৮৫০ ক্যালরি পর্যন্ত ঝরানো সম্ভব।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা : এটাও সহজ একটি ব্যায়াম। কোনো উপকরণের প্রয়োজন হয় না। সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন, আবার নামবেন। কয়েকবার করে করবেন এটি।
সাইক্লিং : সাইকেল থাকলে খোলা মাঠে সাইকেল চালান। আর যদি সাইকেল না থাকে তাহলে জিমে গিয়ে সাইক্লিং করতে হবে। জিমে যেতে না চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ভালো সাইক্লিং মেশিন কিনে নিয়ে ওজন কমাতে কার্যকর এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
সাইক্লিং মেশিন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন- https://www.alaul.com/product/six-pack-care-with-cycle-black/
সাঁতার : সাঁতার একটি পূর্ণ ব্যায়াম। কারণ এর সাহায্যে সারা শরীর নড়াচড়া করা হয়, শ্বাসতন্ত্রেরও উপকার হয়।
দড়ি লাফানো : এটি মেয়েদেরকে বেশি করতে দেখা যায়। এবং এটি কার্যকরও। ১ মিনিট দড়ি লাফের মাধ্যমে ৮০০ এর কাছাকাছি ক্যালরি ঝরে।
যোগব্যায়াম : ‘ইয়োগা’ বর্তমানে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এর সাহায্যে শরীরের উপকারও হয়, এবং মনও ভালো করা যায়। যোগব্যায়ামে বিভিন্ন পেশি সংকুচিত প্রসারিত হয়। ফলে শরীরে চর্বি স্তর জমা হতে পারে না। চর্বি স্তর না জমলে ওজনও বাড়ে না।
যোগব্যায়ামের ভালো সরঞ্জামাদি পাবেন আমাদের এখানেই। আমাদের এই ওয়েবসাইটের Shop অপশনে গেলেই আপনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখতে পাবেন।
দেখুন – https://www.alaul.com/wholesale-marketplace/page/3
ঘুম
কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা পূর্ণ ঘুম হতে হবে। ঘুম ঠিক না হলে পরিপাক ক্রিয়া ঠিক থাকে না। তাই ঠিকমতো ঘুমান।
শেষ করবো,
ধৈর্য্য ও দৃঢ় মনোবলের সাথে ওজন কমাতে এই কাজগুলো করে যেতে পারলে অবশ্যই যেকেউ সফল হবে। এগুলোই বিভিন্ন পুষ্টিবিদ ও ফিটনেস এক্সপার্ট পরামর্শ দিয়ে থাকে।
টাকা খরচ করে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে ও ব্যায়াম করে নিজেই চেষ্টা করুন।